"চল তরিৎ" অথবা ইংরেজিতে "Electric Current" হলো ইলেকট্রন বা অন্য কোনো চার্জ বহনকারী কণার সংগঠিত প্রবাহ। এটি সাধারণত আম্পিয়ার (A) এককে পরিমাপ করা হয়। তরিৎ প্রবাহের দিক সাধারণত ধনাত্মক চার্জ বহনকারীদের গতিপথের সঙ্গে বিবেচিত হয়, যা সংজ্ঞা অনুসারে ঋণাত্মক টার্মিনাল থেকে ধনাত্মক টার্মিনালের দিকে চলে। তবে বাস্তবে, এটি ইলেক্ট্রনের প্রবাহ যা ধনাত্মক টার্মিনাল থেকে ঋণাত্মক টার্মিনালের দিকে হয়।
আমরা জানি, পরিবাহীর যে ধর্মের জন্য এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ বিঘ্নিত হয় তাকে রোধ বলে। কোনো পরিবাহীর রোধ তার দৈর্ঘ্য, প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল, উপাদান ও তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। পরিবাহীর রোধ তার দৈর্ঘ্যের সমানুপাতিক, প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলের ব্যস্তানুপাতিক, উপাদানের আপেক্ষিক রোধের সমানুপাতিক। তাপমাত্রা বাড়লে পরিবাহীর রোধ বাড়ে, কিন্তু রোধ তাপমাত্রার সমানুপাতিক নয়। পরিবাহীর মধ্যে মুক্ত ইলেকট্রনের প্রবাহের ফলে তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয়। মুক্ত ইলেকট্রন প্রবাহের সময় পরিবাহীর অণু পরমাণুর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যার কারণে পরিবাহীতে রোধের উদ্ভব হয়। তাপমাত্রা বাড়লে অতিরিক্ত শক্তি পাওয়ায় পরিবাহীর অণু পরমাণুগুলোর কম্পন বেড়ে যায়, ফলে মুক্ত ইলেকট্রনগুলোর সাথে এদের সংঘর্ষ বৃদ্ধি পায় এবং প্রবাহ চলার পথে বেশি বাধার সৃষ্টি হয়—এতে করে পরিবাহীর রোধ বৃদ্ধি পায়। রোধের উষ্ণতা সহগ তাপমাত্রার সাথে রোধের সম্পর্ক স্থাপন করে।
0°C তাপমাত্রায় কোনো পরিবাহীর রোধ Ro, এবং তাপমাত্রায় রোধ হলে রোধের উষ্ণতা সহগ,
… (3.1)
বিভিন্ন পদার্থের রোধের উষ্ণতা সহগ বিভিন্ন হয়।
রোধের উষ্ণতা সহগের একক হলো প্রতি কেলভিন (K-1) বা প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস (°C-1)। ম্যাঙ্গানিনের রোধের উষ্ণতা সহগ 3 x 10-5 K- বলতে বোঝায় যে 0°C তাপমাত্রার রোধবিশিষ্ট ম্যাঙ্গানিনের তারের তাপমাত্রা 1K বাড়ালে এর রোধ 3 x 10-5 বৃদ্ধি পায়।
যে সকল পরিবাহীর উষ্ণতা সহগ ধনাত্মক তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে তাদের রোধ বৃদ্ধি পায়। অর্ধপরিবাহীর ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে রোধ হ্রাস পায়। অর্ধপরিবাহীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, এদের উষ্ণতা সহগের মান ঋণাত্মক। অতি নিম্ন তাপমাত্রায় কিছু কিছু পদার্থের রোধ শূন্যে নেমে আসে। এ সকল পদার্থকে অতি পরিবাহী বা Super Conductor বলে। পদার্থের এ ধর্মকে অতিপরিবাহিতা বলে।
কোনো পরিবাহীর দুই প্রান্তে বিভব পার্থক্য থাকলে এর মধ্যদিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হয়। পরিবাহীর মধ্যদিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হলে ব্যয়িত তড়িৎ শক্তির কিছু অংশ পরিবাহীর রোধ অতিক্রম করার কাজে ব্যয়িত হয়। এই ব্যয়িত শক্তি পরিবাহীতে তাপ শক্তিরূপে প্রকাশ পায় এবং এর ফলে পরিবাহী উত্তপ্ত হয়। এই প্রক্রিয়াকে তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ক্রিয়া বলা হয় । আমরা দৈনন্দিন জীবনে অহরহ তড়িৎ প্রবাহের এই তাপীয় ক্রিয়াকে কাজে লাগাই । বৈদ্যুতিক হিটার বা চুলা, কেতলি, ইস্ত্রি, বৈদ্যুতিক বাতি, ফিউজ, ফার্নেস প্রভৃতি সবই তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ক্রিয়ার ব্যবহারিক রূপ। বিজ্ঞানী জেম্স প্রেসকট জুল তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ক্রিয়া আবিষ্কার করেন বলে একে জুলের তাপীয় ক্রিয়াও বলা হয় ।
তড়িৎ প্রবাহের ফলে তড়িৎ বর্তনীতে যে তাপের উদ্ভব হয় তার কারণ ইলেকট্রন মতবাদের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়। তড়িৎ পরিবাহীতে বেশ কিছু সংখ্যক মুক্ত ইলেকট্রন থাকে। পরিবাহীর দুই বিন্দুর মধ্যে বিভব পার্থক্য সৃষ্টি হলে মুক্ত ইলেকট্রনগুলো আন্তঃআণবিক স্থানের মধ্যদিয়ে পরিবাহীর নিম্ন বিভব বিশিষ্ট বিন্দু থেকে উচ্চ বিভববিশিষ্ট বিন্দুর দিকে চলতে থাকে, ফলে তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয়। এই ইলেকট্রনগুলো চলার সময় পরিবাহীর পরমাণুর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং ইলেকট্রনের গতিশক্তি পরমাণুতে সঞ্চালিত হয় এবং পরমাণুর গতিশক্তি আরো বৃদ্ধি পায়। এই বর্ধিত গতিশক্তি তাপে রূপান্তরিত হয় এবং পরিবাহীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এ জন্য তড়িৎ প্রবাহের ফলে বর্তনীতে তাপের উদ্ভব পমাত্রা বৃদ্ধি পায় । এ জন্য তড়িৎ প্রবাহের ফলে বর্তনীতে তাপের উদ্ভব হয়।
পরিবাহীতে তড়িৎ প্রবাহের ফলে উদ্ভূত তাপের পরিমাণ এবং প্রবাহের সাথে এর সম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য জুল সর্বপ্রথম পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান এবং এ সম্পর্কে তিনটি সূত্র উপস্থাপন করেন। এগুলোকে জুলের সূত্র বলা হয়।
প্রথম সূত্র-তড়িৎ প্রবাহের সূত্র : পরিবাহীর রোধ (R) এবং প্রবাহকাল (t) অপরিবর্তিত থাকলে তড়িৎ প্রবাহের ফলে উদ্ভূত তাপ (H) প্রবাহের (l) বর্গের সমানুপাতিক হয়।
এ সূত্রানুসারে কোনো নির্দিষ্ট পরিবাহীতে নির্দিষ্ট সময় ধরে কোনো প্রবাহ চালালে যে তাপ উৎপন্ন হয়, তার দ্বিগুণ প্রবাহ সমান সময় ধরে চালালে উদ্ভূত তাপের পরিমাণ চার গুণ হবে, প্রবাহ তিন গুণ করলে তাপের পরিমাণ নয় গুণ হবে।
কোনো পরিবাহীর ভেতর দিয়ে l1,l2,l3 .................... প্রবাহ সমান সময় ধরে চালালে উদ্ভূত তাপের পরিমাণ যথাক্রমে, H1,H2,H3……. হলে, এই সূত্রানুসারে,
অর্থাৎ H R, যখন l ও t ধ্রুব।
এই সূত্রানুসারে ভিন্ন ভিন্ন রোধের পরিবাহীর ভেতর দিয়ে একই পরিমাণ প্রবাহ একই সময় ধরে চালালে, রোধ দ্বিগুণ হলে উদ্ভূত তাপ দ্বিগুণ হবে, রোধ অর্ধেক হলে উদ্ভূত তাপ অর্ধেক হবে ।
একই পরিমাণ প্রবাহ একই সময় ধরে R1,R2,R3….রোধের ভেতর দিয়ে চালালে উদ্ভূত তাপের পরিমাণ যথাক্রমে H1,H2,H3….হলে, এই সূত্রানুসারে,
=… ধ্রুব।
অর্থাৎ H l, যখন l ও R ধ্রুব।
এই সূত্রানুসারে কোনো নির্দিষ্ট পরিবাহীর ভেতর দিয়ে একই পরিমাণ প্রবাহ বিভিন্ন সময় ধরে চালালে, প্রবাহকাল দ্বিগুণ হলে উদ্ভূত তাপ দ্বিগুণ হবে, প্রবাহকাল অর্ধেক হলে উদ্ভূত তাপ অর্ধেক হবে।
কোনো নির্দিষ্ট পরিবাহীর ভেতর দিয়ে একই পরিমাণ প্রবাহ t1,t2,t3….. সময় ধরে চালালে উদ্ভূত তাপের পরিমাণ যথাক্রমে H1, H2,H3……. হলে, এই সূত্রানুসারে,
= ধ্রুব।
আমরা জানি, তাপ শক্তির একটি রূপ এবং তাপের একক জুল। এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অর্থাৎ এস. আই একক চালু হওয়ার আগে তাপের বিভিন্ন এককের প্রচলন ছিল, যার মধ্যে ছিল ব্রিটিশ তাপীয় একক এবং ক্যালরি (cal)। ক্যালরি এককটি বহুল প্রচলিত ছিল। বিশ্বজুড়ে এস. আই পদ্ধতি চালু হওয়ায় এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছাড়া কোনো বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব নেই। যদিও এখনও দৈনন্দিন জীবনে বিশেষ করে স্বাস্থ্য, খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান সম্পর্কিত বিভিন্ন জনপ্রিয় ও সুখপাঠ্য লেখায় ক্যালরির ব্যবহার দেখা যায়।
আমরা জানি, গৃহীত বা বর্জিত তাপ = ভর x আপেক্ষিক তাপ × তাপমাত্রার পার্থক্য
বা, H = ms
আমরা জানি, তাপ এক প্রকার শক্তি। অন্যান্য শক্তিকে যেমন তাপশক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়, তেমনি তাপশক্তিকেও অন্যান্য শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়। আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে শক্তির একক একটিই জুল এবং তাপের এককও জুল। কিন্তু আগে যখন তাপের একটি একক হিসেবে ক্যালরি প্রচলিত ছিল তখন হিসাব নিকাশের জন্য জুলকে ক্যালরিতে বা ক্যালরিকে জ্বলে রূপান্তরের প্রয়োজন হতো। এর জন্য ক্যালরি ও জুলের মধ্যে একটি সম্পর্ক স্থাপনের প্রয়োজন ছিল। অপের যান্ত্রিক সমতা এর মাধ্যমে এ সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছিল। তখন কাজ বা যান্ত্রিক শক্তিকে 'জুল' এবং তাপশক্তিকে 'ক্যালরি' এককে পরিমাপ করা হতো। W জুল কাজ সম্পন্ন করলে যদি H ক্যালরি তাপ উৎপন্ন হতো বা H ক্যালরি তাপ প্রয়োগে যদি W জুল পরিমাণ কাজ পাওয়া যেত তাহলে শক্তির নিত্যতা তথা সংরক্ষণ সূত্র থেকে আমরা পাই,
H ক্যালরি = W জুল।
বা, I ক্যালরি = জুল।
এই অর্থাৎ কাজ ও তাপের অনুপাতকে বলা হয় তাপের যান্ত্রিক সমতা। বিজ্ঞানী জুল সর্বপ্রথম পরীক্ষার মাধ্যমে এই সম্পর্ক স্থাপন করেন অর্থাৎ -এর মান নির্ণয় করেন। এজন্য এই অনুপাত অর্থাৎ তাপের যান্ত্রিক সমতাকে J দ্বারা H
প্রকাশ করা হয় ।
:- J =
এই সমীকরণ থেকে দেখা যায়
H = 1 একক হলে J = W হয় ।
তাপের যান্ত্রিক সমতা j -কে তাই নিম্নোক্তভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় :
বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে কাজ বা ব্যয়িত শক্তি W-কে জ্বলে পরিমাপ করে এবং উৎপাদিত তাপ H-কে ক্যালরিতে পরিমাপ করে (3,4) সমীকরণে মান বসিয়ে J-এর মান পাওয়া গেছে,
J = 4.2
অর্থাৎ 1 ক্যালরি তাপ দ্বারা 4.2 জুল কাজ করা যায়, বা ক্যালরি তাপ উৎপন্ন করতে 4.2 জুল কাজ করতে হয় । অর্থাৎ ক্যালরি এবং 4.2 জুল পরস্পর সমান ।
সুতরাং 1 ক্যালরি = 4.2 জুল।
যে যন্ত্রের সাহায্যে রাসায়নিক শক্তি থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে তড়িৎ প্রবাহ পাওয়া যায় তাকে তড়িৎ কোষ ৰলে ।
কোনো কোনো কোষ বিভিন্ন বস্তুর রাসায়নিক ক্রিয়ার সাহায্যে সরাসরি তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি করে। যেমন- লেকল্যান্স কোষ, শুষ্ক কোষ ইত্যাদি।
কোনো কোনো কোষ বাইরে থেকে পাঠানো তড়িৎ প্রবাহ রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে রাখে এবং পরে সেই রাসায়নিক শক্তিকে পুনরায় তড়িৎ প্রবাহে রূপান্তরিত করে। যেমন-সীসা এসিড সঞ্চয়ক কোষ।
তড়িচ্চালক শক্তি হয় কোনো কোষের বা কোনো তড়িৎ উৎসের। কোনো কোষের কাজ হচ্ছে বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহ চালনা করা অর্থাৎ কোষের সংযোগকারী বর্তনীর ভেতর দিয়ে আধান চালনার জন্য প্রয়োজনীয় তড়িৎ শক্তি সরবরাহ করা।
তড়িচ্চালক শক্তি দ্বারা কোষের বা তড়িৎ উৎসের এই তড়িৎ শক্তির পরিমাপ পাওয়া যায়। প্রতি একক আধানকে কোষ সমেত কোনো বর্তনীর এক বিন্দু থেকে সম্পূর্ণ বর্তনী ঘুরিয়ে আবার ঐ বিহুতে আনতে যে কাজ সম্পন্ন হয় অর্থাৎ কোষ যে তড়িৎ শক্তি সরবরাহ করে তাকে ঐ কোষের তড়িচ্চালক শক্তি বলে ।
q আধানকে কোষ সমেত কোনো বর্তনীর এক বিন্দু থেকে সম্পূর্ণ বর্তনী ঘুরিয়ে পুনরায় ঐ বিন্দুতে আনতে যদি W কাজ সম্পন্ন হয়, তাহলে কোষের তড়িচ্চালক শক্তি,
মুক্ত অবস্থায় অর্থাৎ যখন তড়িৎ প্রবাহ চলে না তখন কোষের দুই পাতের যে বিভব পার্থক্য হয় তার দ্বারা কোষের তড়িচ্চালক শক্তি পরিমাপ করা হয়। যখন কোষটি তড়িৎ প্রবাহ চালনা করে তখন এর দুই পাতের বিভব পার্থক্য কোষের তড়িচ্চালক শক্তির চেয়ে কম হয়।
একক : যেহেতু, তড়িচ্চালক শক্তি হচ্ছে =কাজ/আধান তাই কাজের একককে আধানের একক দিয়ে ভাগ করলে তড়িচ্চালক শক্তির একক পাওয়া যায়। সুতরাং তড়িচ্চালক শক্তির একক হচ্ছে =জুল/কুলম্ব বা JC-1 অর্থাৎ ভোল্ট (V)।
দেখা যাচ্ছে, তড়িচ্চালক শক্তি ও বিভব পার্থক্যের একক একই অর্থাৎ ভোল্ট (V)।
একটি কোষের তড়িচ্চালক শক্তি 1.5 V বলতে বোঝায় । C আধানকে ঐ কোষ সমেত কোনো বর্তনীর এক বিন্দু থেকে একবার সম্পূর্ণ বর্তনী ঘুরিয়ে পুনরায় ঐ বিন্দুতে আনতে 1.5J কাজ সম্পন্ন হয় ।
কোনো কোষের দুই প্রান্ত একটি পরিবাহী তার দিয়ে যুক্ত করলে পরিবাহীর যুক্ত ইলেকট্রনগুলো প্রবাহিত হয়ে তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি করে। ইলেকট্রনগুলো যে গড় বেগে প্রবাহিত হয় তাকে সঞ্চরণ বেগ বা তাড়ন বেগ বলে। পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ I হলে,
I = nAve
তড়িৎ কোষযুক্ত কোনো বর্তনীতে যখন প্রবাহ চলে তখন এই প্রবাহ কোষের ভেতরে তরল বা অন্যান্য পদার্থের মধ্য দিয়েও প্রবাহিত হয়। কোষের ভেতর তড়িৎ প্রবাহের দিক কোষের ঋণাত্মক পাত থেকে ধনাত্মক পাতের দিকে। এই পাতদ্বয়ের মধ্যকার বিভিন্ন পদার্থ তড়িৎ প্রবাহের বিরুদ্ধে যে বাধার সৃষ্টি করে তাকে কোষের অভ্যন্তরীণ রোধ বলে। প্রত্যেক তড়িৎ উৎসের অর্থাৎ যার তড়িচ্চালক শক্তি থাকে তার একটি নিজস্ব রোধ থাকেই। একেই অভ্যন্তরীণ রোধ বলা হয়। একে সাধারণত দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
যে বর্তনীতে সর্বত্র একই প্রবাহ চলে তাকে সরল বর্তনী বলে। E তড়িচ্চালক শক্তি ও অভ্যন্তরীণ রোধের একটি কোষের সাথে R রোধের রোধক চাবি K এর সাহায্যে যুক্ত করে বর্তনী পূর্ণ করা হলো [চিত্র ৩.৩]।
চাবি বন্ধ করলে প্রবাহ চলে। ধরা যাক, এই প্রবাহের মান l কোষের তড়িচ্চালক শক্তি E ভোল্ট এর মানে | C আধানকে পূর্ণ বর্তনীতে A বিন্দু থেকে রোধক R এর মধ্যদিয়ে চালনা করে পুনরায় A-তে আনতে কোষ E জুল শক্তি সরবরাহ করে। এই E শক্তির এক অংশ v ব্যয় হয়। কুলম্ব আধানকে R-এর মধ্যদিয়ে A বিন্দু থেকে B বিন্দুতে চালনা করতে এবং বাকি অংশ V" ব্যয়িত হয় অভ্যন্তরীণ রোধ। এর মধ্য দিয়ে B থেকে A-তে আধান চালনা করতে। সুতরাং শক্তির নিত্যতা সূত্রানুসারে,
E=V+V'
কিন্তু V হলো A ও B অর্থাৎ R এর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য এবং V হলো অভ্যন্তরীণ রোধ - এর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য। ও'মের সূত্র প্রয়োগ করে আমরা পাই,
V = IR এবং V = Ir
:- E = IR + Ir... (3.10)
(3.9) এবং (3.10) সমীকরণ থেকে দেখা যায় যে, তড়িচ্চালক শক্তি E-এর একটি অংশ " = Ir কোষের অভ্যন্তরীণ রোধের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চালনা করতে ব্যবহৃত হয় এবং বাকি অংশ V = IR = E - IR ব্যবহৃত হয় বাইরের রোধের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চালনা করতে। বাইরের কাজের জন্য কোষের ক্রিয়া থেকে প্রাপ্ত এই V = IR অংশকে কোষের প্রান্তীয় বিভব পার্থক্য বা প্রাপ্ত ভোল্ট বলে। যখন তড়িৎ প্রবাহ চলে তখন কোষের এই প্রান্তীয় বিভব পার্থক্য তড়িচ্চালক শক্তি E-এর চেয়ে lr পরিমাণ কম হয়।
কোষের তড়িচ্চালক শক্তির অংশ V' = Ir = E-IR যা কোষের ভেতর দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চালনা করতে ব্যয়িত হয় তাকে অনেক সময় অভ্যন্তরীণ বিভব পতন বা হারানো ভোল্ট বা নষ্ট ভোল্ট বলে। কেননা তড়িৎ প্রবাহ চলাকালীন ভোল্টমিটারের সাহায্যে কোনো কোষের দুই পাতের বিভব পার্থক্য পরিমাপ করা হলে মুক্ত অবস্থার বিভব পার্থক্যের চেয়ে এই পরিমাণ বিভব পার্থক্য কম পাওয়া যায়।
:- E = IR (প্রান্তীয় ভোল্টেজ) + Ir (অভ্যন্তরীণ বিভব পতন)
শক্তিশালী প্রবাহ পাওয়ার জন্য একাধিক কোষ একত্রে ব্যবহার করাকে কোষের সমন্বয় বলে । কোষের সমন্বয়কে অনেক সময় সমবায়, সন্নিবেশ বা সমাবেশও বলে। একাধিক কোষ এক সাথে ব্যবহার করলে তাকে ব্যাটারিও বলা হয়। কোষের সমন্বয় দুই প্রকার হয়ে থাকে।
কতগুলো তড়িৎ কোষ যদি পর পর এমনভাবে সাজানো থাকে যে, প্রথম কোষের ঋণাত্মক পাতের সাথে দ্বিতীয় কোষের ধনাত্মক পাত, দ্বিতীয় কোষের ঋণাত্মক পাতের সাথে তৃতীয় কোষের ধনাত্মক পাত এবং বাকিগুলো এরূপে সংযুক্ত থাকে তাকে শ্রেণি সমন্বয় বলে।
প্রবাহ নির্ণয় : ধরা যাক, R মানের বাইরের রোধের সাথে সংখ্যক তড়িৎ কোষ শ্রেণি সমন্বয়ের যুক্ত আছে [চিত্র ৩:৪]। আরো ধরা যাক, প্রতিটি কোষের তড়িচ্চালক শক্তি E এবং অভ্যন্তরীণ রোধ r । সমন্বয়ের মোট তড়িচ্চালক শক্তি Es, এবং তুল্য অভ্যন্তরীণ রোধ rs হলে বর্তনীর প্রবাহ ls হবে, ও'মের সূত্রানুসারে
কিন্তু কোষগুলো শ্রেণি সমন্বয়ে থাকায় মোট তড়িচ্চালক শক্তি হবে Es = E + E +…. n সংখ্যক পদ = nE এবং অভ্যন্তরীণ রোধ হবে rs =r+r+….. n সংখ্যক পদ = nr
:-
যে কোনো একটি কোষের প্রবাহের সমান হয়। এ সমবায় থেকে কোনো বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায় না।
সুতরাং যখন কোষের অভ্যন্তরীণ রোধ r -এর তুলনায় বাইরের রোধ R অনেক বড় হয় তখন শক্তিশালী প্রবাহ পাওয়ার জন্য কোষের শ্রেণি সমন্বয় ব্যবহার করা হয়।
প্রবাহ নির্ণয় : ধরা যাক, সমান্তরাল সমন্বয়ে m সংখ্যক কোষ আছে যাদের প্রত্যেকের তড়িচ্চালক শক্তি E এবং অভ্যন্তরীণ রোধ r । এ সমন্বয়ের সাথে R মানের বাইরের রোধ সংযুক্ত আছে [চিত্র ৩.৫]। সমন্বয়ের মোট তড়িচ্চালক শক্তি Ep এবং তুল্য অভ্যন্তরীণ রোধ rp বর্তনীর প্রবাহ Ip হবে, ও'মের সূত্রানুসারে,
কিন্তু সমান তড়িচ্চালক শক্তিবিশিষ্ট কোষগুলো সমান্তরালে আছে বলে সমন্বয়ের কোষগুলোর মোট তড়িচ্চালক শক্তি যে কোনো একটি কোষের তড়িচ্চালক শক্তির সমান।
অর্থাৎ Ep = E। আর কোষগুলো সমান্তরাল আছে বলে তাদের অভ্যন্তরীণ রোধগুলোও সমান্তরালে সজ্জিত,
সুতরাং m সংখ্যক পদ
=
বা,
সুতরাং যখন কোষের অভ্যন্তরীণ রোধ r-এর তুলনায় বাইরের রোধ R ছোট হয় তখন শক্তিশালী প্রবাহ পাওয়ার জন্য সমান্তরাল সমন্বয় ব্যবহার করা হয়।
সরল বর্তনীতে ও'মের সূত্র প্রয়োগ করে বর্তনীর প্রবাহ, রোধ প্রভৃতি নির্ণয় করা যায়। কিন্তু বর্তনী জটিল হলে ও'মের সূত্র তার জন্য যথেষ্ট হয় না। যে কোনো বর্তনীর প্রবাহ, রোধ ইত্যাদি নির্ণয়ের জন্য ফিলফের দুটি সূত্র আছে। সূত্রগুলো নিচে দেয়া হলো :
অর্থাৎ
যেহেতু বর্তনীর কোনো বিন্দুতেই তড়িতাধান সঞ্চিত হয় না কাজেই যে কোনো সংযোগ বিন্দুতে আগত মোট প্রবাহ ঐ বিন্দু থেকে নির্গত মোট প্রবাহের সমান হবে।
৩.৬ চিত্রে সংযোগ বিন্দু O-তে I1 ও I2 প্রবেশ করছে এবং ঐ বিন্দু থেকে l2, l4 ও I5, প্রবাহ নির্গত হচ্ছে।
এখন আগত প্রবাহগুলোকে ধনাত্মক ও নির্গত প্রবাহগুলোকে ঋণাত্মক ধরলে কির্শফের সূত্রানুসারে,
l1 + l3 -l2 -l4 - l5 = 0
আগত প্রবাহকে ঋণাত্মক এবং নির্গত প্রবাহকে ধনাত্মক ধরলেও একই ফল পাওয়া
অর্থাৎ … (3.15)
এ সূত্রানুসারে কোনো আবদ্ধ বর্তনীতে বিভিন্ন অংশে যে সকল প্রবাহ চলে ঐ সকল প্রবাহকে আনুষঙ্গিক রোধ দিয়ে গুণ করলে ঐ বর্তনীর মোট তড়িচ্চালক শক্তির সমান হবে।
এই সূত্র চিত্র ৩.৭-এর মতো যে কোনো আবদ্ধ বর্তনীতে প্রয়োগ করা যায়। E তড়িচ্চালক শক্তির উৎসসহ একটি আবদ্ধ বর্তনী ABDA বিবেচনা করা যাক। তীর চিহ্নের মাধ্যমে বর্তনীর স্বতন্ত্র অংশের প্রবাহের অভিমুখ দেখানো হয়েছে। বর্তনী বরাবর যেতে প্রতিটি বাহুর রোধকে যদি আমরা আনুষঙ্গিক প্রবাহ দিয়ে গুণ করি এবং সর্বশেষ সবগুলো যোগ করি তাহলে আমরা যে মান পাই তা E-এর সমান। অন্য কথায়,
I1r1 + l2r2 + I6r6 = E
আবদ্ধ বর্তনীর (যেমন, ABDFA) কোনো বাহুতে যদি কোষ না থাকে তাহলে তীর চিহ্নিত পথে বর্তনী দিয়ে যেতে আমরা পাই,
l1r1 + l2r2 - l3r3 - l4r4 = 0
এখানে চিহ্ন নেয়ার নিয়মটি স্বেচ্ছাগৃহীত। আমরা কখনো যদি তড়িৎ প্রবাহের নির্দিষ্ট দিককে নির্বাচন করি তাহলে তড়িচ্চালক শক্তি দ্বারা ঐ দিকে পাঠানো প্রবাহকে ধনাত্মক ধরা হবে এবং এর বিপরীত দিকে পাঠানো প্রবাহকে ঋণাত্মক ধরা হবে। কোনো আবদ্ধ বর্তনীতে যদি ঘড়ির কাটার গতির অভিমুখে প্রবাহগুলোকে ধনাত্মক ধরা হয়, তাহলে ঘড়ির কাঁটার গতির বিপরীত দিকের প্রবাহগুলো হবে ঋণাত্মক। বিপরীতক্রমে যদি ঘড়ির কাঁটার গতির বিপরীত দিকের প্রবাহগুলোকে ধনাত্মক ধরলে ঘড়ির কাঁটার গতির অভিমুখে প্রবাহগুলো হবে ঋণাত্মক।
কোনো জটিল বর্তনীতে অনেকগুলো আবদ্ধ বর্তনী থাকলে সবগুলো আবদ্ধ বর্তনীতেই প্রবাহের অভিমুখের বেলায় অবশ্যই একই নিয়ম মেনে চলতে হবে। এতে হিসাবের জটিলতা বিশেষ করে চিহ্ন বিষয়ক জটিলতা অনেক কমে যায়। কোনো আবদ্ধ বর্তনীতে যদি দুই বা ততোধিক তড়িচ্চালক শক্তির উৎস থাকে তাহলে ঐ বর্তনীর মোট তড়িচ্চালক শক্তির উৎস হবে স্বতন্ত্র তড়িচ্চালক শক্তিগুলোর বীজগাণিতিক যোগফল। যোগের সময় তাদের অভিমুখ অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।
অর্থাৎ
(Uses of Kirchhof's Laws)
৩.৮ চিত্রে A ও B বিন্দুর মধ্যে দুটি রোধ R ও R2 সমান্তরাল সংযোগে সাজানো আছে। মূল প্রবাহ I হলে তা A বিন্দুতে এসে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে R1 ও R2 এর মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে পুনরায় B বিন্দুতে মিলিত হয়। ধরা যাক,
R1 ও R2-এর মধ্যদিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহের মান যথাক্রমে l1 ও l2 ।
আমরা এখন কির্শফের সূত্র ব্যবহার করে তড়িৎ প্রবাহ l1 ও l2 এবং A ও B বিন্দুর বিভব পার্থক্য নির্ণয় করবো।
A বিন্দুতে কির্শফের ১ম সূত্র প্রয়োগ করে পাই,
I = l1 + l2
ABA বদ্ধ বর্তনীতে কির্শফের ২য় সূত্র প্রয়োগ করে পাই,
l1R1 - l2R2 =0
বা, I1R1 =I2R2
চারটি রোধ পরপর শ্রেণিবদ্ধভাবে যদি এমনভাবে সাজানো হয় যে, প্রথমটির প্রথম প্রান্তের সাথে শেষটির শেষ প্রাপ্ত মিলে একটি বদ্ধ বর্তনী তৈরি হয় এবং যে কোনো জুটি রোধের সংযোগস্থল ও অপর দুটি রোধের সংযোগস্থলের মধ্যে একটি কোষ ও অন্য দুটি সংযোগস্থলের মাঝে একটি গ্যালভানোমিটার যুক্ত থাকে তবে সেই বর্তনীকে হুইটস্টোন ব্রিজ বলে।
৩-৯ নং চিত্রে P, Q, S S R এই চারটি রোধ পর পর সাজিয়ে একটি বদ্ধ বর্তনী তৈরি করা হয়েছে। P ও R-এর সংযোগস্থল A এবং Q ও S এর সংযোগস্থল C-এর মধ্যে চাবি K সহ একটি কোষ E যুক্ত আছে। P ও Q এর সংযোগস্থল B এবং R ও S এর সংযোগস্থল D এর মধ্যে একটি গ্যালভানোমিটার যুক্ত করা আছে যার রোধ G। এটি একটি হুইটস্টোন ব্রিজ।
চাবি বন্ধ করলে কোষ E থেকে প্রবাহ I নির্গত হয়ে A বিন্দুতে এসে l1 ও l2 এ দু অংশে বিভক্ত হয়ে যথাক্রমে P ও R এর মধ্য দিয়ে B ও D বিন্দুতে পৌঁছে। এখন B বিন্দুর বিভব D বিন্দুর বিভবের চেয়ে বেশি হলে l1 এর কিছু অংশ lg গ্যালভানোমিটারের মধ্য দিয়ে D বিন্দুতে এসে l2-এর সাথে মিলে l4 হয়ে S-এর মধ্যদিয়ে C-তে পৌঁছায়। অপরদিকে এর বাকি অংশ l3, Q-এর মধ্যদিয়ে C তে পৌঁছে l4 এর সাথে মিলে মোট প্রবাহ l হয়ে E-তে ফিরে আসে। আর D বিন্দুর বিভব B বিন্দুর চেয়ে বেশি হলে l2-এর কিছু অংশ গ্যালভানোমিটারের মধ্যদিয়ে B বিন্দুতে এসে l2-এর সাথে মিলিত হয়ে Q-এর মধ্যদিয়ে C-তে পৌঁছায় এবং l2 এর বাকি অংশ S- এর মধ্যদিয়ে C-তে পৌঁছে মোট প্রবাহ I হয়ে E-তে ফিরে আসে।
কিন্তু B ও D বিন্দুর বিভব সমান হলে গ্যালভানোমিটারের মধ্যদিয়ে কোনো প্রবাহ চলবে না অর্থাৎ lg = 0 হবে ফলে গ্যালভানোমিটারের কাঁটাও বিক্ষিপ্ত হবে না। এই অবস্থাকে হুইটস্টোন ব্রিজের ভারসাম্য অবস্থা বা সাম্য অবস্থা বা নিস্পন্দ অবস্থা বলে।
৩.৭ চিত্রানুসারে B বিন্দুতে কির্শফের প্রথম সূত্র প্রয়োগ করে পাওয়া যায়,
বা, …(3.21)
আবার D বিন্দুতে কির্শকের প্রথম সূত্র প্রয়োগ করে পাওয়া যায়,
…(3.22)
গ্যালভানোমিটারের ভেতর দিয়ে যখন কোনো তড়িৎ প্রবাহিত হয় না অর্থাৎ হুইটস্টোন ব্রিজের ভারসাম্য অবস্থায় lg =0
তখন (3.21) সমীকরণ থেকে পাওয়া যায়, I1 = l3
(3.22) সমীকরণ থেকে পাওয়া যায়, l2 = l4
এটিই হুইটস্টোন ব্রিজের ভারসাম্যের শর্ত। (3.27) সমীকরণ থেকে দেখা যায় যে, P, Q, R ও S এর মধ্যে যে কোনো তিনটি রোধ জানা থাকলে চতুর্থ রোধ নির্ণয় করা যায়। হুইটস্টোন ব্রিজের চারটি রোধ P, Q, R এবং S কে হুইটস্টোন ব্রিজের যথাক্রমে ১ম বাহু, ২য় বাহু, ৩য় বাহু ও ৪র্থ বাহু বলা হয়।
গ্যালভানোমিটার একটি সুবেদী যন্ত্র। গ্যালভানোমিটারের মধ্য দিয়ে বেশি পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহ চালনা করা হলে এটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে, এর স্প্রিং ছিঁড়ে যেতে বা পুড়ে যেতে পারে। তাই গ্যালভানোমিটারকে রক্ষা করার জন্য এর সাথে সমান্তরাল সংযোগে একটি অল্পমানের রোধ সংযুক্ত করে একটি বিকল্প পথের সৃষ্টি করা হয়। সমান্তরাল সংযোগে লাগানো এই রোধকেই শান্ট বলা হয়। এর ফলে মূল প্রবাহ দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় এবং শার্টের রোধ কম হওয়ায় বেশি পরিমাণ প্রবাহ এর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং অল্প পরিমাণ প্রবাহ গ্যালভানোমিটারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় । এতে গ্যালভানোমিটার নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়।
আবার গ্যালভানোমিটার বর্তনীতে শ্রেণি সংযোগে যুক্ত করতে হয় তাই এর রোধ বর্তনীতে কার্যকর হয়, ফলে বর্তনীর প্রবাহের মান পরিবর্তিত হতে পারে। এর জন্যে গ্যালভানোমিটারের কুণ্ডলীর সাথে সমান্তরাল সংযোগে একটি অল্প মানের রোধ সংযুক্ত করা হয়। ফলে যন্ত্রের তুল্য রোধ খুব কম হয়, তাই গ্যালভানোমিটার বর্তনীতে যুক্ত করলে বর্তনীর প্রবাহ কার্যত অপরিবর্তিত থাকে। অধিক পরিমাণ প্রবাহ গিয়ে যাতে গ্যালভানোমিটারকে নষ্ট করতে না পারে তার জন্য গ্যালভানোমিটারের সাথে সমান্তরাল সংযোগে যে অল্পমানের রোধ সংযুক্ত করা হয় তাকে শান্ট বলে।
বর্তনীর তুল্য রোধ কমানোর জন্যে বর্তনীতে অল্প মানের যে রোধ সমান্তরালে সংযুক্ত করা হয় তাকেই শান্ট বলা হয়।
ধরা যাক, গ্যালভানোমিটারের রোধ G। এর সাথে A ও B বিন্দুতে সমান্তরাল সংযোগে S মানের রোধ শান্ট হিসেবে যোগ করা হয়েছে। বর্তনীর মূল প্রবাহ I এসে A বিন্দুতে Ig ও ls শাখায় বিভক্ত হয়ে যথাক্রমে গ্যালভানোমিটার ও শার্টের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে [চিত্র ৩.১৩]। অতএব
l = lg + Is
A ও B বিন্দুর বিভব যথাক্রমে VA ও VB হলে
আমরা জানি,
গ্যালভানোমিটারের ক্ষেত্রে, VA - VB = IgG
এবং শান্টের ক্ষেত্রে, VA - VB = ls S
এই দুই সমীকরণের তুলনা থেকে পাওয়া যায়,
IsS = lg G
বা,
শান্টের ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখা যায় অ্যামিটারে। প্রবাহ পরিমাপের যন্ত্র হচ্ছে অ্যামিটার।
যে যন্ত্রের সাহায্যে বর্তনীর তড়িৎপ্রবাহ সরাসরি অ্যাম্পিয়ার এককে পরিমাপ করা যায় তাকে অ্যামিটার বলে। একে বর্তনীর সাথে শ্রেণি সমবায়ে যুক্ত করতে হয়।
এই যন্ত্রে একটি চলকুগুলী জাতীয় গ্যালভানোমিটার থাকে। কুগুলীর বিক্ষেপ নির্ণয়ের জন্য কুণ্ডলী তলের সমকোণে একটি সূচক বা কাঁটা লাগানো থাকে। সূচকটি অ্যাম্পিয়ার এককে দাগকাটা একটি স্কেলের উপরে ঘুরতে পারে। কুণ্ডলীর সাথে সমান্তরাল সমবায়ে একটি অল্পমানের রোধ লাগানো থাকে [চিত্র ৩.১৪]।
যেহেতু অ্যামিটারটিকে বর্তনীতে শ্রেণি সমন্বয়ে যুক্ত করতে হয় তাই এর রোধ বর্তনীতে কার্যকর হয়, ফলে বর্তনীর প্রবাহের মান পরিবর্তিত হতে পারে। এর জন্য গ্যালভানোমিটারের কুণ্ডলীর সাথে সমান্তরাল সমবায়ে একটি অল্পমানের রোধের তার শান্ট হিসেবে যুক্ত করা হয়। এতে যন্ত্রের তুল্য রোধ খুব কম হয়, ফলে অ্যামিটার বর্তনীতে যুক্ত করলে বর্তনীতে প্রবাহের কার্যত কোনো পরিবর্তন হয় না এবং প্রবাহের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র কুণ্ডলীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং যন্ত্রটি নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়।
ধরা যাক, যে গ্যালভানোমিটার দ্বারা অ্যামিটার তৈরি করা হয়েছে তার রোধ G এবং গ্যালভানোমিটার সর্বাধিক যে প্রবাহ নিতে পারে তার মান Ig । একে সর্বাধিক l প্রবাহ পরিমাপের উপযোগী অ্যামিটারে পরিণত করতে হলে এর সাথে যদি S রোধের শান্ট ব্যবহার করতে হয়, তবে
:- ... (3.31)
কুণ্ডলীর ভেতর দিয়ে প্রবাহ চললে সূচকটি স্কেলের উপর ঘুরে যায়। প্রবাহ যত বেশি হবে সূচকের বিক্ষেপও তত বেশি হবে। একটি আদর্শ যন্ত্রের সাথে তুলনা করে এর স্কেল অ্যাম্পিয়ারে দাগ কাটা হয়। অ্যামিটারকে একটি স্বল্প রোধের শান্ট যুক্ত অ্যাম্পিয়ারে দাগাঙ্কিত গ্যালভানোমিটার হিসেবে ধরা যেতে পারে।
অ্যামিটারের পাল্লা বৃদ্ধি : একটি অ্যামিটার সর্বাধিক যে পরিমাণ তড়িৎপ্রবাহ পরিমাপ করতে পারে তাকে তার পাল্লা বলে। একটি অল্প পাল্লার অ্যামিটারকে সহজেই বেশি পাল্লার অ্যামিটারে পরিণত করা যায় অর্থাৎ কম প্রবাহ পরিমাপে সক্ষম অ্যামিটারকে বেশি প্রবাহ পরিমাপে সক্ষম যন্ত্রে পরিণত করা হয় । অ্যামিটারটি সর্বোচ্চ যে তড়িৎপ্রবাহ পরিমাপ করতে পারে তার ” গুণ প্রবাহ ঐ অ্যামিটার দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব। এর জন্য অ্যামিটারের সাথে সমান্তরাল সমন্বয়ে একটি অত্যন্ত অল্পমাত্রার রোধ যুক্ত করতে হয় অর্থাৎ একটি শান্ট ব্যবহার করতে হয় [চিত্র ৩-১৫]।
ধরা যাক, অ্যামিটারটির অভ্যন্তরীণ রোধলে S রোধ লাগাতে হবে। তাহলে,
যন্ত্রের বর্ণনা এই যন্ত্রে সাধারণত 10 মিটার লম্বা একটি তার কাঠের ফ্রেমের উপর একটি মিটার স্কেলের গা বরাবর আটকানো থাকে। এই তারটিকে প্রতিটি 1 মিটার দীর্ঘ এরূপ 10টি ভাগে ভাগ করে শ্রেণি সংযোগে যুক্ত করা হয় এবং এগুলোকে পর পর সংযুক্ত করে A ও B বিন্দুর মধ্যে যুক্ত করা হয় [চিত্র ৩.২৩]। এমন পদার্থের তার নেয়া হয় যার রোধের উষ্ণতা সহগ খুব কম। সাধারণত ম্যাঙ্গানিন বা কনস্ট্যানটানের তার নেয়া হয়। একটি পিতলের তৈরি তিন পায়া জকি তারগুলোর দৈর্ঘ্য বরাবর বামে বা ডানে চলাচল করতে পারে এবং চলাচল করার সময়
ধরা যাক, পটেনশিওমিটারের তারের প্রতি সেন্টিমিটারের দৈর্ঘ্যের রোধ Ω এবং এর ভিতর দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চলছে I অ্যাম্পিয়ার। এখন E1, তড়িচ্চালক শক্তির কোষ বর্তনীতে সংযুক্ত করলে যদি পটেনশিওমিটারের তারের l দৈর্ঘ্যে গ্যালভানোমিটারে শূন্য বিক্ষেপ পাওয়া যায় তাহলে,
E1 = l1 cm তারের প্রান্তীয় বিভব পার্থক্য
= l x l1 cm তারের রোধ =
একইভাবে E2 তড়িচ্চালক শক্তির কোষের জন্য যদি l2 দৈর্ঘ্যে শূন্য বিক্ষেপ পাওয়া যায় তাহলে,
E2=l l2
পটেনশিওমিটার, ব্যাটারি, রিয়োস্ট্যাট, দুটি কোষ যাদের তড়িচ্চালক শক্তি তুলনা করতে হবে, দ্বিমুখী চাবি, প্লাগচাবি, জকি, গ্যালভানোমিটার, সংযোগকারী তার, শিরিষ কাগজ। কাজের ধারা :
১. ৩.২৪ চিত্রানুযায়ী A ও B বিন্দুর মধ্যে একটি ব্যাটারি E (যার তড়িচ্চালক শক্তি পরীক্ষণীয় কোষদ্বয়ের প্রত্যেকটির তড়িচ্চালক শক্তির চেয়ে বেশি), চাবি, K রিয়োস্ট্যাট Rh শ্রেণি সমবায়ে সাজানো হয়। ব্যাটারি E-এর ধনাত্মক পাত A-বিন্দুর সাথে যুক্ত থাকে। যে কোষদ্বয়ের তড়িচ্চালক শক্তি E1 ও E2 এর তুলনা করতে হবে তাদের ধনাত্মক পাতদ্বয়কেও A বিন্দুর সাথে এবং ঋণাত্মক পাতদ্বয়কে একটি দ্বিমুখী চাবি K K2 এর মাধ্যমে একটি গ্যালভানোমিটার ও রোধ বাক্সের মধ্য দিয়ে জকিতে যুক্ত করা হয় । [ লক্ষণীয় সবগুলো ব্যাটারি ও কোষের ধনাত্মক পাত A বিন্দুতে সংযুক্ত। ]
২. রোধ বাক্সে বেশ বড় মানের রোধ নেয়া হয় যাতে গ্যালভানোমিটারের মধ্যে বেশি মাত্রায় তড়িৎ প্রবাহিত না হয়। এখন K চাবি বন্ধ করে পটেনশিওমিটারের তারের মধ্যে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করা হয়।
মিটার ব্রিজ হুইটস্টোন ব্রিজের একটি ব্যবহারিক রূপ। মিটার ব্রিজের সাহায্যে কোনো পরিবাহীর রোধ নির্ণয় করা যায়। এবং তা থেকে পরিবাহীর উপাদানের আপেক্ষিক রোধ নির্ণয় করা যায়।
কোনো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একক দৈর্ঘ্যের ও একক প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলের কোনো পরিবাহীর রোধকে ঐ তাপমাত্রায় ঐ পরিবাহীর উপাদানের আপেক্ষিক রোধ বলে। রোধের সূত্র থেকে আমরা জানি পরিবাহীর রোধ P হলে,
.. (1)
এখানে,
p = তারের উপাদানের আপেক্ষিক রোধ
P = তারের রোধ
L = তারের দৈর্ঘ্য
r = তারের ব্যাসার্ধ
π = 3.14, ধ্রুবসংখ্যা ।
তারের দৈর্ঘ্য মিটারে, প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল বর্গমিটারে এবং রোধ ও 'ম-এ পরিমাপ করলে আপেক্ষিক রোধের একক হবে ও'ম -মিটার।
এই যন্ত্রে একটি কাঠের ফ্রেমের উপর তিনখানা নগণ্য রোধের তামার বা পিতলের পাত a, b ও c বসানো থাকে। এতে a ও b-এর মধ্যে একটি ফাঁক বা শূন্যস্থান এবং b ও c-এর মধ্যে একটি ফাঁক থাকে। ৫ ও পাতের যথাক্রমে A ও C বিন্দুর সাথে এক মিটার লম্বা সুষম প্রস্থচ্ছেদের ম্যাঙ্গানিনের রোধ তার টানা দেওয়া থাকে [চিত্র ৩.১৯]। এই তারের পাশে বা নিচে একটি মিটার স্কেল বসানো থাকে যার সাহায্যে এই তারের যে কোনো অংশের দৈর্ঘ্য নির্ণয় করা যায়। এই তারের দৈর্ঘ্য ঠিক এক মিটার হওয়ায় এই যন্ত্রের নাম মিটার ব্রিজ হয়েছে।
এর একটি পা (L) সব সময় পিতলের পাত R, R-কে স্পর্শ করে থাকে। এই পাতের সাথে যুক্ত সংযোজক জ্বর সাথে গ্যালভানোমিটারকে সংযুক্ত করা হয়। জকির মাঝ বরাবর একটি চাবির সাথে আরেকটি পা থাকে, চাবি টেপা হলে এই পা তার স্পর্শ করে। চাবিকে সামনে পেছনে সরিয়ে যে কোনো তারের সাথে এই পাকে স্পর্শ করানো যায়।
২. পরীক্ষা শুরু করার আগে প্রথমে দেখে নিতে হবে বর্তনী সংযোগ ঠিক আছে কিনা। এজন্য প্রথমে রোধ বাক্স থেকে যে কোনো মানের ধরা যাক, 1 মানের প্লাগ তুলে নেয়া হয়। এতে বর্তনীতে জানা রোধের মান হবে এক ওম। এবার চাবি K বন্ধ করে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করা হয়। এখন গ্যালভানোমিটারের কাঁটার সাথে সংযুক্ত জকিটিকে মিটার ব্রিজের তারের এক প্রান্তে স্পর্শ করানো হয়। ফলে গ্যালভানোমিটারের বিক্ষেপ দেখা যাবে। এখন জকিটিকে মিটার ব্রিজের তারের অপর প্রান্তে স্পর্শ করানো হয়। যদি গ্যালভানোমিটারের কাঁটার বিক্ষেপ বিপরীত দিকে হয় তাহলে বুঝতে হবে বর্তনীটি ঠিকভাবে সংযোজিত হয়েছে। যদি কাঁটার বিক্ষেপ একই দিকে দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে বর্তনী সংযোগে ত্রুটি আছে এবং ভালোভাবে পরীক্ষা করে সংযোগ ঠিক করে নিতে হবে।
৩. রোধ বাক্স থেকে যে অংকের রোধের প্লাগ তোলা হবে বর্তনীতে তত ও'ম হবে জানা রোধ, Q । এখন জকিটিকে মিটার ব্রিজের তারের এক প্রান্তে স্পর্শ করানো হয়। গ্যালভানোমিটারের কাঁটার বিক্ষেপ লক্ষ করে জকিটিকে তারের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের দিকে তারের ওপর বার বার স্পর্শ করিয়ে এমন এক বিন্দুতে আনা হয় যেখানে গ্যালভানোমিটারে কোনো বিক্ষেপ থাকবে না। জকির এই অবস্থানকে নিস্পন্দ বিন্দু বলে। ব্রিজ তারের বাম প্রান্ত থেকে এই বিন্দুর দূরত্ব সংযুক্ত মিটার স্কেলের সাহায্যে দেখে নেয়া হয় । এই দূরত্ব ।
৪. রোধ বাক্স থেকে জানা রোধ অর্থাৎ Q-এর মান পরিবর্তন করে ।-এর পাঠ নেয়া এবং (2) নং সমীকরণের সাহায্যে অজানা রোধ P নির্ণয় করা হয়।
৫. ডান ফাঁকে অজানা রোধ এবং বাম ফাঁকে রোধ বাক্স স্থাপন করা হয়।
৬. উপরিউক্ত প্রক্রিয়ায় l নির্ণয় করে ( 3 ) সমীকরণের সাহায্যে অজানা রোধ P নির্ণয় করা হয়। সবগুলো P-এর গড় হবে পরীক্ষণীয় তারের রোধ ।
৭. মিটার স্কেলের সাহায্যে পরীক্ষণীয় তারের দৈর্ঘ্য এবং ক্রুগজের সাহায্যে এর ব্যাসার্ধ মেপে নেয় হয় ।
৯. পরীক্ষালব্ধ উপাত্ত ছকে বসিয়ে (1) সমীকরণের সাহায্যে তারের উপাদানের আপেক্ষিক রোধ নির্ণয় করা হয় ।
পর্যবেক্ষণ ও সন্নিবেশন :
১. পরীক্ষণীয় তারের দৈর্ঘ্য, L = ... cm
২. স্কু গজের পিচ = mm..
৩. ক্রুগজের বৃত্তাকার স্কেলের মোট ভাগ সংখ্যা =
হিসাব :
প্রদত্ত তারের উপাদানের আপেক্ষিক রোধ, p = ...........2m সতর্কতা :
১. সংযোগ তারের প্রান্ত এবং সংযোগ স্ক্রু শিরিষ কাগজ দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে নেয়া হয়।
২. নিস্পন্দ বিন্দু নির্ণয়ের আগে গ্যালভানোমিটার কাঁটার বিপরীত বিক্ষেপ দেখে নেয়া হয়।
৩. তাড়িতচৌম্বকীয় আবেশ পরিহারের জন্য আগে কোষ বর্তনী বন্ধ করে পরে জকিটি ব্রিজ তারে স্পর্শ করানো হয়।
৪. রোধ বাক্সের প্লাগগুলো শক্ত করে লাগানো হয় ।
৫. সমান চাপে জকিটি তারে স্পর্শ করানো হয়।
৬. নিষ্পদ বিন্দু সতর্কতার সাথে লক্ষ করা হয়।
৭. অতিরিক্ত প্রবাহের জন্য গ্যালভানোমিটার যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য শান্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
যে রোধ বাক্সের রোধগুলোকে হুইটস্টোন ব্রিজের তিনটি বাহু হিসেবে বিবেচনা করে এর সাহায্যে হুইটস্টোন ব্রিজের নীতি ব্যবহার করে কোন অজানা রোধ নির্ণয় করা যায়, তাকে পোস্ট অফিস বক্স বলে। পোস্ট অফিস বক্স হুইটস্টোন ব্রিজের আরেকটি ব্যবহারিক রূপ। পূর্বে পোস্ট অফিসের লোকজন টেলিগ্রাম, টেলিফোন লাইনের তারের রোধ নির্ণয়ের জন্য এই যন্ত্র ব্যবহার করতেন বলে একে পোস্ট অফিস বক্স বলা হয়।
পোস্ট অফিস বক্স একটি বিশেষ ধরনের রোধ বাক্স। ৩২০ চিত্রে এই যন্ত্রের একটি নক্শা দেখানো হলো। ৩.২২ চিত্রে যন্ত্রের মূল বিষয়গুলো সহজ করে দেখানো হয়েছে। এই বাক্সে তিন লাইনে রোধ সাজানো থাকে। এই রোধগুলো তিনটি অংশে বিভক্ত থাকে । যন্ত্রের প্রথম লাইন AC দুটি অংশ AB ও BC-তে বিভক্ত। প্রতিটি অংশে 10, 100 ও 1000 ও মের তিনটি করে রোধ কুণ্ডলী থাকে। এই অংশ দুটি হুইটস্টোন ব্রিজের প্রথম ও দ্বিতীয় বাহুর অর্থাৎ P ও Q রোধের কাজ করে এবং এদের বলা হয় অনুপাত বাহু। তৃতীয় অংশ যন্ত্রের দ্বিতীয় ও তৃতীয় লাইন মিলে A থেকে D পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এটি হুইটস্টোন ব্রিজের তৃতীয় বাহুর অর্থাৎ R রোধের কাজ করে, এতে সাধারণত 1 থেকে 5000 ও'মের বিভিন্ন রোধ কুণ্ডলী শ্রেণি সমন্বয়ে যুক্ত থাকে। যে কোন কুণ্ডলীর প্লাগ তুললে ঐ রোধ বর্তনীর অন্তর্ভুক্ত হয়। এভাবে 11110 ও'ম পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত করা যায়। প্রকৃতপক্ষে এই বাহুর রোধ নিয়ন্ত্রণ করেই ভারসাম্য অবস্থার সৃষ্টি করা হয়।
পরিবাহীর যে ধর্মের জন্য এর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয় তাকে রোধ বলে। হুইটস্টোন ব্রিজের চারটি বাহুর যে কোনো তিনটি বাহুর রোধ জানা থাকলে চতুর্থ বাহুর রোধ নির্ণয় করা যায় ।
হুইটস্টোন ব্রিজের নীতির ওপর ভিত্তি করে পোস্ট অফিস বাক্স তৈরি করা হয়েছে। পোস্ট অফিস বাক্সের অনুপাত বাহুদ্বয় P ও Q যথাক্রমে হুইটস্টোন ব্রিজের প্রথম ও দ্বিতীয় বাহু (চিত্র ৩.২১)। বাক্সের R বাহু হুইটস্টোন ব্রিজের তৃতীয় বাহু। যে পরিবাহীর রোধ নির্ণয় করতে হবে সেটি C ও D এর মধ্যে সংযুক্ত করা হয় এবং এটি হুইটস্টোন ব্রিজের চতুর্থ বাহু S গঠন করে। এখন P, Q এবং R বাহুর রোধের মান যদি এমন করা হয় যেন গ্যালভানোমিটারের মধ্য দিয়ে কোনো তড়িৎ প্রবাহ না চলে তাহলে হুইটস্টোন ব্রিজের নীতি থেকে আমরা জানি,
এখানে S = অজানা রোধ
:- ... (1)
P, Q ও R-এর মান জেনে অজানা রোধ S নির্ণয় করা হয়।
১. যে পরিবাহীর রোধ S নির্ণয় করতে হবে তাকে এই যন্ত্রের C ও D বিন্দুর মধ্যে সংযুক্ত করা হয় (চিত্র ৩.২২)। একটি টেপা চাবি (যা পোস্ট অফিস বাক্সের সাথে লাগানো থাকে) K-এর মাধ্যমে A ও C বিন্দুর মধ্যে ব্যাটারি E এবং অপর টেপা চাবি K2 এর মাধ্যমে B ও D বিন্দুর মধ্যে গ্যালভানোমিটারে যুক্ত করা হয়।
২. পরীক্ষা শুরু করার আগে প্রথমে দেখে নিতে হবে বর্তনী সংযোগ ঠিক আছে কিনা। এজন্য P ও Q অনুপাত বাহুদ্বয়ের প্রত্যেকটি থেকে 10 প্লাগ তোলা হয়। R-বাহু থেকে কোন প্লাগ তোলা হয় না অর্থাৎ R বাহুর রোধ শূন্য। এখন আগে ব্যাটারি বর্তনীর চাবি K এবং পরে গ্যালভানোমিটার বর্তনীর চাবি K2 চাপা হয়।
এতে গ্যালভানোমিটারে বিক্ষেপ দেখা যাবে। এখন K1 ও K2 চাবি ছেড়ে দিয়ে R-বাহু থেকে "INF" (অসীম) চিহ্নিত প্লাগটি তুলে প্রথমে K1 ও পরে K2 চাপলে যদি গ্যালভানোমিটারে বিপরীত দিকে বিক্ষেপ দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে বর্তনী সংযোগ ঠিক আছে। আর যদি একই দিকে বিক্ষেপ দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে সংযোগে ত্রুটি আছে এবং সতর্কতার সাথে ত্রুটি সংশোধন করতে হবে।
৩. এখন অজানা রোধ S নির্ণয়ের জন্য অনুপাত বাহুদ্বয়ের প্রত্যেকটি থেকে 10 প্লাগ ভোলা অবস্থায় প্রথমে K1 ও পরে K2 চেপে ধরে R বাহু থেকে ক্রমাগত পর্যায়ক্রমে নিম্নমান ও উচ্চমানের রোধের প্লাগ তোলা হয় এবং গ্যালভানোমিটারে বিক্ষেপ লক্ষ করা হয়। R বাহুর রোধ এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় যেন R 12 এবং (R+ 1) মানের রোধে গ্যালভানোমিটারে বিপরীত বিক্ষেপ পাওয়া যায়। এই অবস্থানে অজানা রোধের মান হবে R ও (R+ 1 ) এর মধ্যে।
৪. কাজের ধারা (৩)-এ গ্যালভানোমিটারে শূন্য বিক্ষেপ না পাওয়া গেলে P বাহুতে 100Ω এবং Q বাহুতে 10Ω প্লাগ তোলা হয়। এই অবস্থায় R গ্যালভানোমিটারে 'শূন্য বিক্ষেপ' পাওয়ার জন্য R-এর মান পরিবর্তন করা হয়। R বাহুতে R রোধের জন্য গ্যালভানোমিটারে শূন্য বিক্ষেপ' পাওয়া গেলে অজানা রোধ । [P Q = 100 : 10 রোধ নিয়ে 0.1 পর্যন্ত রোধ সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায় 0.1 ভগ্নাংশ সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হলে অনুপাত বাহুর রোধের মান পরিবর্তন করতে হবে। ]
৫. কাজের ধারা (৪)-এ গ্যালভানোমিটারে শূন্য বিক্ষেপ' না পাওয়া গেলে P বাহুতে 1000 এবং 2 বাহুতে 10 প্লাগ তোলা হয়। এই অবস্থায় গ্যালভানোমিটারে শূন্য বিক্ষেপ' পাওয়ার জন্য R বাহুর রোধের মান পরিবর্তন করা হয়। R বাহুতে R রোধের জন্য গ্যালভানোমিটারে শূন্য বিক্ষেপ' পাওয়া গেল। অজানা রোধ
৬. কাজের ধারা (৫)-এ যদি শূন্য বিক্ষেপ না পাওয়া যায় তাহলে R বাহুতে রোধের মান এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় যেন R2 ও (R+1) মানের রোধে গ্যালভানোমিটারে বিপরীত বিক্ষেপ পাওয়া যায়। এখন R মানের রোধের জন্য গ্যালভানোমিটার কাঁটার বামদিকে বিক্ষেপ d1 ঘর এবং (R + 1) মানের রোধের জন্য ডান দিকে বিক্ষেপ d2 হলে R বাহুতে যে মানের রোধের জন্য শূন্য বিক্ষেপ পাওয়া যাবে তার মান =
সুতরাং অজানা রোধ,
প্রদত্ত রোধের পরীক্ষালব্ধ মান :
S =…Ω
১. সংযোগকারী তার ও সংযোগ স্ক্রু শিরিষ কাগজ দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে নেয়া হয় এবং সংযোগ দৃঢ়ভাবে করা হয়।
২. রোধবাক্সের এবং পোস্ট অফিস বাক্সের প্লাগগুলো খুব শক্তভাবে লাগানো হয় ।
৩. স্বকীয় আবেশ পরিহারের জন্য ব্যাটারি বর্তনীর চাবি আগে এবং পরে গ্যালভানোমিটার বর্তনীর চাবি বন্ধ করা নীর পর ভাবি আগে এবং হয়।
৪. নিস্পন্দ বিন্দু নির্ণয়ের পূর্বে বিপরীত বিক্ষেপ দেখে নেয়া হয় ।